top of page

কবি আল মাহমুদের জন্য লড়েছিলেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী।। মোঃ জেহাদ উদ্দিন


আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানোর স্রষ্টা আব্দুল গাফফার চৌধুরী আজ ১৯ মে ২০২২ লন্ডনে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর লেখা একটি নিবন্ধ তুলে ধরছি। ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদ ইন্তেকাল করেন। ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা এই কবিকে কেউ কেউ বিতর্কিত করেছে। সেই পরিস্থিতিতে আব্দুল গাফফার চৌধুরী তাৎক্ষণিকভাবে কলম ধরেন। লন্ডন থেকে তিনি লিখেন: "কবি আল মাহমুদ আর নেই। লন্ডনের বাড়িতে শনিবার যখন খবরটা পেলাম, তখন আমি লিখতে বসেছি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে। প্রথমে ভেবেছি, ভাষা নিয়ে লেখাটা বন্ধ করি। আল মাহমুদকে শ্রদ্ধা জানাই। পরে মনে হল আল মাহমুদ যে ভাষার একজন প্রধান কবি, সেই ভাষার আন্দোলন নিয়ে লেখাটা বন্ধ হওয়া উচিত নয়। আল মাহমুদকে নিয়ে লিখব, তবে শোকটা একটু থিতু হোক। শোকটা থিতু হয়নি। দীর্ঘদিনের অদর্শনে আল মাহমুদ স্মৃতিতে ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলেন। মৃত্যুতে আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন। ৮২ বছর বয়সে মৃত্যু অবশ্যই পরিণত বয়সের মৃত্যু। কিন্তু প্রকৃত কবিরা কখনও মনের বার্ধক্যে পৌঁছেন না। আল মাহমুদও পৌঁছেননি। তার সাম্প্রতিককালের কবিতা, উপন্যাস পড়েও মনে হতো না কবি বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। তিনি নিজে বলতেন তার অসুস্থতার কথা, বার্ধক্যের কথা। কিন্তু তার কলমে তার পরিচয় পাওয়া যেত না। সেজন্যই তার মৃত্যুতে শোকাভিভূত হয়েছি। এতটা শোক পাওয়ার আরও বড় কারণ, রাজনৈতিক মতানৈক্য সত্ত্বেও আল মাহমুদ ছিলেন আমার ঘনিষ্ঠজন, প্রিয় কবি। আল মাহমুদ ছিলেন পঞ্চাশের নক্ষত্র। এই নক্ষত্রগুলোর অধিকাংশই ধীরে ধীরে কালের অতলে হারিয়ে গেছেন। হারায়নি তাদের মেধা ও প্রতিভার প্রখর দ্যুতি। তাদের শেষ দু’জনের মধ্যে শহীদ কাদরী কিছুদিন আগে চলে গেছেন। এখন গেলেন আল মাহমুদ। আমি নিজেও পঞ্চাশের দশকের লেখক। নিজের চোখের সামনেই একটা সবচেয়ে সৃষ্টিশীল যুগের অবসান প্রত্যক্ষ করছি। যুগের অবসান হয়। কিন্তু অবসান হয় না সেই সৃষ্টিশীল যুগের সৃষ্টি ও কীর্তির। তাই অবিভক্ত বাংলার ত্রিশের দশক আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি পালাবদলের যুগ হিসেবে এখনও ইতিহাসে জাগ্রত। কবি বিষ্ণু দে, সমর সেন, বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তী, গোলাম কুদ্দুস, জীবনানন্দ দাশ- এই নামগুলো বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও কি কেউ ভুলে যাবে? ....... আল মাহমুদ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। একাত্তর সালেই কলকাতায় তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। তখন তার কবিতা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে অগ্নিবর্ষী। এই কবিতাগুলোর কোনো সংকলন আমি দেখিনি। কলকাতায় পৌঁছার কিছুদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের আধুনিক কবিকুলের কাছে আল মাহমুদ পরম সমাদৃত হন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাকে ‘বাংলা ভাষার একজন শক্তিমান কবি’ বলে কলকাতার পত্রপত্রিকায় মন্তব্য করেন। ইউরোপের ফ্যাসিবাদ এবং হিটলার-মুসোলিনির অভ্যুত্থানকালে বিখ্যাত কবি এজরা পাউন্ড এবং বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ন্যুট হামসুন ফ্যাসিবাদকে সমর্থনদানের জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এজন্য তৎকালীন ইউরোপীয় সরকারগুলো তাদের যথেষ্ট হেনস্থা করেছে, কিন্তু বিরাট প্রতিভাশালী কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে তাদের অবদান অস্বীকার করেনি, তাদের মর্যাদা কেড়ে নেয়নি। বাংলাদেশ সরকারেরও উচিত আল মাহমুদের শেষ বয়সের রাজনীতিকে নয়, তার অসাধারণ কাব্য প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেয়া এবং সম্মান জানানো। আল মাহমুদ আমার বয়সে ছোট। তবু তাকে আমার শেষ শ্রদ্ধা জানাই।" (দৈনিক যুগান্তর, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯)


কবি আল মাহমুদের জন্য লড়েছিলেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী যা ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। আজ চৌধুরী সাহেব আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিলেন। তিনি সকলের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।


Comments


পাঠক নিবন্ধন ফর্ম​

জমা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ!

লেখা প্রদানের জন্য মেইল করুন

banglakotha2011@gmail.com

©2025 by Banglakotha

Bangladesh

bottom of page