পহেলা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।। যে বিষয়গুলো জানা জরুরি
- মো জেহাদ উদ্দিন
- Jul 1
- 10 min read

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে যদি বলা হয় যে এককভাবে কার অবদান রয়েছে, তাহলে প্রথম যে নামটি আসবে সে নামটি হল নবাব স্যার সলিমুল্লাহ।
পূর্ব বাংলা ও আসামের পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠী তথা সর্বসাধারণের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য ১৯০৫ সালে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠন করা হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থন্বেষী মহল শুরু থেকেই এর চরম বিরোধিতা করতে থাকে। বিরোধিতা একটি পর্যায়ে সহিংস আন্দোলনের রূপ নেয় এবং তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আন্দোলন চালু করা হয়। এক পর্যায়ে ইংরেজ সরকার বাধ্য হয়ে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ বা বাতিল ঘোষণা করে অর্থাৎ পূর্ব বাংলা ও আসাম নামক যে স্বতন্ত্র প্রদেশ ১৯০৫ সালে গঠন করা হয়েছিল এবং ঢাকাকে এর রাজধানী করা হয়েছিল তা ১৯১১ সালে বাতিল করে দেওয়া হয়। এতে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পঞ্চম জর্জ এর স্তুতি গেয়ে লিখলেন, 'জনগণমন অধিনায়ক' যা পরবর্তীতে ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি পায়। উল্লেখ করা যেতে পারে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে অর্থাৎ পূর্ব বাংলা ও আসাম এই নতুন প্রদেশের বিরোধিতা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক লেখা লিখেছিলেন, যেমন আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার মাটি বাংলার ফল এক হোক এক হোক হে ভগবান, যদি তোর ডাক শোনে কেউ না আসে ইত্যাদি।
নবাব সলিমুল্লাহ পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ গঠনের ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন । ১৯১১ সালে যখন তা বাতিল হয়ে যায় সঙ্গত কারণেই তিনি সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছিলেন। এবার তিনি ইংরেজ সরকারের কাছে তিনি দাবি উত্থাপন করলেন যে, পূর্ব বাংলা ও আসামের পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অবশ্য এ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, তা হবে এ অঞ্চলের সর্বসাধারণের উপকারার্থে। ইংরেজ সরকার এই দাবি মেনে নেন।

প্রফেসর সুফিয়া আহমেদ লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চিন্তানায়কদের মধ্যে নওয়াব সলিমুল্লাহ একজন অন্যতম অগ্রদূত ও পথিকৃৎ ছিলেন। প১৯০৫ সালে বঙ্গবিভাগের পর থেকেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের উপর বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আসছিলেন। (সূত্র: সুফিয়া আহমেদ, নওয়াব খাজা সলিমুল্লাহ, জার্নাল অফ দি এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ, ভলিউম ২১, ৩ ডিসেম্বর ১৯৭৬ পৃষ্ঠা ১৫২ ও ১৬৯)
পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার ল্যান্সলট হেয়ার কে বিদায় এবং স্যার স্টুয়ার্ট বেইলিকে স্বাগত জানানোর জন্য ১৯ আগস্ট ১৯১১ সালে সকাল ৮:৩০ মিনিটে কার্জন হলে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় প্রদেশের নবাব রাজা-মহারাজা খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ উচ্চ রাজ কর্মচারীগণ এবং ঢাকা কলেজের ছাত্রগণ নিমন্ত্রিত হয়ে হল ঘরটি একেবারে পরিপূর্ণ করেছিলেন। এই অনুষ্ঠানে পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রাদেশিক মুসলমান শিক্ষা সমিতি এবং প্রাদেশিক মুসলিম লীগ বিদায়ী ছোটলাট হেয়ার কে যে অভিনন্দন পত্র দেন তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। মুসলমান সমিতির উক্ত অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ। (সূত্র: ঢাকা প্রকাশ ২০ আগস্ট ১৯১১ পৃষ্ঠা ১০)
উক্ত অভিনন্দন পত্রের উত্তরে ছোটলাট হেয়ার সাহেব বলেন, এ প্রদেশে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও আপনারা প্রকাশ করেছেন। আপনাদের এই ইচ্ছার প্রতি মনোযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে যথেষ্ট টাকা ব্যয় করা দরকার আমার মনে হয় আপনারা সত্ত্বর বিশ্ববিদ্যালয় পাবেন না।
বঙ্গভঙ্গ রদের পর নবাব সলিমুল্লাহ অন্যান্য বিষয়গুলোর সাথে পূর্ব বাংলার শিক্ষার উন্নতির বিষয়েও ভীষণভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাই তিনি ১৯১১ সালের ২০ শে ডিসেম্বর বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে ৮ টি দাবী সম্বলিত একটি পত্র দেন এবং তাতে শিক্ষা বিষয়ক দাবিগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, যেমন-
১. পূর্ব বাংলার মুসলমানদের শিক্ষা তত্ত্বাবধানের জন্য একজন যুগ্ম পরিচালক নিয়োগ করতে হবে;
২. মুসলমানদের উচ্চ শিক্ষা খাতে বিশেষ অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে;
৩. মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের জন্য গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
এছাড়া পূর্ব বাংলার বিভিন্ন সমস্যা এখানকার মুসলিম নেতৃবৃন্দ যেন বড়লাটের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে বলার সুযোগ পান সে বিষয়টিও নবাব সলিমুল্লাহ তাঁর পত্রে উল্লেখ করেন।
নবাব সলিমুল্লাহর এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালের ২৯শে জানুয়ারি তিন দিনের জন্য ঢাকা সফরে আসেন। ৩১শে জানুয়ারি সকাল ১১ টায় নবাব সলিমুল্লার নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তার সাথে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে তারা কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করেন। পূর্ব বাংলার মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বড়লাটের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এতে উল্লেখ করা হয়, হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানরা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বারা উপকৃত হয়নি বললেই চলে। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে তাদের শিক্ষার উন্নয়নের ধারাবাহিকতাজনিত ক্ষতিপূরণের জন্য এবং মুসলমানদের প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্বেষ পোষণের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার জন্য বড়লাটের কাছে জোরালো দাবি উত্থাপন করেছিলেন। (সূত্র: এম এ রহিম হিস্ট্রি অফ দা ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ঢাকা ১৯৮১, পৃষ্ঠা ৫)
এ বিষয়ে ১৯২১ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় পেশকৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাসের পক্ষে প্রদত্ত ভাষণে নওয়াবজাদা খাজা মোহাম্মদ আফজাল বলেছিলেন, মুসলমান সম্প্রদায়ের অনুরোধে সাড়া দিয়েই ১৯১২ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওয়াদা করেছিলেন। যাই হোক নবাব সলিমুল্লাহ তথা মুসলমানদের ক্ষোভ ও আশঙ্কা প্রশমিত করাই ছিল উক্ত ঘোষণার অন্যতম উদ্দেশ্য। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনুদানরূপ পেশ করেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণাকে মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ মনে করে নয় বরং শিক্ষা লাভের সোপান বিবেচনা করে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তারা এর বাস্তবায়নের যথাসাধ্য চেষ্টা চালাতে থাকেন। অন্যদিকে হিন্দুরা এর বিরোধিতায় উঠে পড়ে লাগেন। যদিও হিন্দু প্রতিনিধি দলের কাছে বড়লাট হার্ডিঞ্জ পরিষ্কার করে বলেছিলেন যে, প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে ছাত্রাবাস সম্বলিত শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান এবং এর জন্য কোন সীমা নির্দেশ করা হবে না। ১৬ ই ফেব্রুয়ারি ১৯২২ ডাক্তার রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের হিন্দু প্রতিনিধি দল বড় লাটের সাথে দেখা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে নানা যুক্তি পেশ করলে বড় লাট উত্তরে এ কথা বলেন। (সূত্র: ঢাকা প্রকাশ ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯১২ পৃষ্ঠা ৩ হিস্টরি অফ দা ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা, পৃষ্ঠা ৬)
৩১শে জানুয়ারি ১৯১২ মুসলিম প্রতিনিধি দলের কাছে বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলেও সম্ভবত হিন্দুদের বিরোধিতার কথা ভেবে তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে কেউই তা প্রকাশ করেননি। ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১২ সকাল আটটায় ঢাকার সূত্রাপুরে পন্ডিত মাধবচন্দ্রের সংস্কৃতি টোলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা প্রকাশ করেন। উক্ত তথ্য প্রকাশের সাথে সাথেই হিন্দু বুদ্ধিজীবী ও নেতৃবৃন্দের মধ্যে এর বিরোধিতার যাবতীয় প্রস্তুতি চলতে থাকে। তাদের বিরুদ্ধাচারণের অজুহাত ছিল প্রধানত দুই ধরনের। কোন কোন সভায় পূর্ব বাংলাবাসীরা চাষাভুষা, দরিদ্র ও অশিক্ষিত বিধায় এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ঠিক হবে না বলা হয়। আবার কোন কোন সভায় বলা হয়, এর ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ধারা তথা এদেশের শিক্ষার মানের ক্ষতি হবে। ফলে ভাষা ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিভাগ বা বিভাজন সাধিত হবে। তারা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে, সভা সমিতিতে বক্তৃতা করে, ভাইসরয়ের কাছে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অপ্রয়োজনীয়তা কথা তুলে ধরেন। কংগ্রেস সমর্থিত কিছু মুসলিমও তাদের সুরে সুর মিলায়। যেমন ব্যারিস্টার আব্দুর রসুল, মাওলানা আকরাম খাঁ, মৌলভী আবুল কাশেম। (সূত্র: ঢাকা প্রকাশ ৩১ মার্চ ১৯১২)
বড়লাট কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার পর নবাব সলিমুল্লাহ ও মুসলিম নেতৃবৃন্দ তা বাস্তবায়নে যে কি পরিমাণ উৎকণ্ঠিত এবং প্রচেষ্টারত ছিলেন তা ঢাকা নবাব স্টেট অফিস থেকে প্রাপ্ত দুষ্প্রাপ্য তিনটি পত্র থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়। পত্রগুলো উক্ত ঘোষণার পরপরই সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী কর্তৃক কলকাতা থেকে ঢাকায় নবাব সলিমুল্লাহকে লেখা হয়েছিল। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে নবাব সলিমুল্লাহর পরই ছিল সৈয়দ নাওয়াব আলী চৌধুরীর ভূমিকা। হিন্দুদের বিরোধিতার মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পক্ষে জনসমর্থন আদায় করার জন্য নওয়াব আলী চৌধুরী তাৎক্ষণিকভাবে কলকাতায় গমন করেন। সেখানে তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহকে ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯১২ সালে একটি পত্র দেন। এই পত্রে তিনি বলেন, নবাব সলিমুল্লাহ যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বড়লাটের ঘোষণাকে সমর্থন করার জন্য ভারতবর্ষের সকল মুসলিম আঞ্জুমানকে তারবার্তা পাঠান। তাছাড়া মফস্বলের আঞ্জুমানগুলো যেন কালক্ষেপণ না করে বড়লাটকে উক্ত ঘোষণার জন্য ধন্যবাদ প্রদান করেন। অধিকন্তু প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষামূলক ও আবাসিক যেন হয় তারা যেন এরূপ আবেদন করেন। উক্ত পত্রে নওয়াব আলী চৌধুরী আরো জানান, মাননীয় আগা খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবকে অকুণ্ঠভাবে সমর্থন করে এর পক্ষে এ কাজগুলো করতে বলেছেন। তিনি তাঁকে দেওয়া আগাখানের পরামর্শ সম্বলিত পত্রের একটি কপিও নবাব সলিমুল্লাহকে পাঠান।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকা থেকে নওয়াব আলী চৌধুরীকে একটি তারবার্তা পাঠান। ১২ ফেব্রুয়ারি জনাব চৌধুরী পুনরায় নবাব সলিমুল্লাহকে পত্র লিখেন। তাতে তিনি বলেন, পত্রিকান্তরে বিরুদ্ধবাদীদের কথা প্রায়ই প্রকাশিত হলেও আমাদের কোনো সমিতির সমর্থনের কথা প্রকাশিত হচ্ছে না। কোন কোন প্রাদেশিক লীগের সদস্যরা আগে ঢাকায় আমরা এই বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেই সেদিকে তাকিয়ে আছে। তিনা আরো জানান, কলকাতায় অনুষ্ঠিত বেঙ্গল প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কার্যনির্বাহী সভায় এমন কয়েকজন আছেন যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন। তিনি এবং জনাব শামসুল হুদা বিশেষভাবে প্রতিবাদ না করলে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নিতো। এসব বিরুদ্ধেবাদীদের দমন করার জন্য বেঙ্গল মুসলিম লীগের সাধারণ সভা ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বার লাইব্রেরীতে মুসলিম উকিল আব্দুল ওয়াজেদ বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন জানতে পেরে নওয়াব আলী চৌধুরী আশ্চর্য হন। উক্তপত্রে তিনি নবাব সলিমুল্লাহকে তার উপর ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের দলে আনার জন্য অনুরোধ করেন।
১৯১২ সালের ৩ ও ৪ মার্চ কলকাতায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের পঞ্চম সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধবাদীদের তীব্র সমালোচনা করেন এবং সকলের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপকারিতার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন।
(এই বক্তৃতাটি এ সঙ্গে সংযুক্ত করা হলো)
১৯১২ সালেই নাথান কমিটির রিপোর্ট দাখিল হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ প্রভৃতি কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বিলম্বিত হয়। ইতোমধ্যে ১৯১৫ সালের ১৬ই জানুয়ারি নবাব সলিমুল্লাহর ইন্তেকালের মাধ্যমে এই নিয়ে সর্বোচ্চ সোচ্চার কণ্ঠটি স্তব্ধ হয়ে যায়। ১৯১৭ সালে নওয়াব আলী চৌধুরী ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাটি উত্থাপন করেন। উত্তরে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিলের খসড়া প্রস্তুত রয়েছে এবং যুদ্ধ শেষে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
১৯২০ সালের ১৮ই মার্চ ভাইসরয় ব্যবস্থাপক পরিষদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাস হয়। সেখানেও হিন্দু সদস্যগণ এর বিরোধিতা করেন। (সূত্র: ঢাকা প্রকাশ ৪ এপ্রিল ১৯২০, পৃষ্ঠা ৪)।
তবে গভর্নর জেনারেল ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ বিলে সম্মতি দেন। হিন্দুদের ওই বিরোধিতার কথা জানতে পেরে খান বাহাদুর খাজা মোহাম্মদ আজম তাদের কঠোর সমালোচনা করেন। খাজা মোহাম্মদ আজম ছিলেন নবাব সলিমুল্লাহর ভগ্নিপতি, তার মানে নবাবজাদি মেহেরবানুর স্বামী। নবাব সলিমুল্লার মৃত্যুর পর তিনি বাংলার রাজনীতি ও সমাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯১৬ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলমান সমিতির সেক্রেটারি হন। মুসলমানদের মধ্যে সঠিক সৃষ্টির জন্য প্রাদেশিক মুসলিম সমিতির আওতায় তিনি ১৯২০ সালে ঢাকা জেলা মুসলমান সমিতি গঠন করেন। উক্ত সমিতির উদ্বোধনী ভাষণে তিনি মুসলিমদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। এছাড়া ওই ভাষণে তিনি বড়লাট আইন পরিষদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট পাশের সময় কিছু হিন্দু সদস্যের বিরোধিতার কঠোর সমালোচনা করে বলেন:
We have been sorry to see that a number of Hindu members of the Vice- regal council vented their malice against the Musalmans and showed unkindness to them during the passage of Bill. We never expected such treatment from them.
১৯২১ সালের ১৭ মার্চ বাংলা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্যবস্থাপক পরিষদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৯ লক্ষ টাকা গ্র্যান্ড প্রদানের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু পরিষদের কোন কোন হিন্দু সদস্য ওই গ্রান্ট এর বিরোধিতা করেন। মিস্টার ডি সি ঘোষ ৯ লক্ষ্যের স্থলে তিন লক্ষ এবং প্রফেসর সতীশচন্দ্র মুখার্জী দুই লক্ষ করার সংশোধনী প্রস্তাব করেন। তখন মুসলিম সদস্যের মধ্যে ঢাকা নবাব পরিবারের সদস্য খাজা মোহাম্মদ আজম এবং খাজা মোহাম্মদ আফজাল এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ওই সংশোধনী প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন। খাজা আজম বলেন, বঙ্গ বিভাগের পর পূর্ববঙ্গের শিক্ষার বিশেষ উন্নতি হওয়ায় সরকার ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন অনেক আগে। কিন্তু বহু টানাহেঁচড়া ও বাকবিতণ্ডার মধ্য দিয়ে সবেমাত্র তা প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গ্রহণের বেশ পরে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। অথচ ইহা এর অনেক আগেই ১৯১৭ সালে অস্তিত্ব লাভ করেছে। খাজা মোহাম্মদ আজম আরও বলেন:
Eastern Bengal supplies the bulk of Bengal income and we do not grudge that the bulk of its expenditure is swallowed by West Bengal, and I cannot understand why West Bengal people should grudge us a pittance which has been long overdue and should have been given to us years back. I cannot also understand the jealousy of Calcutta University men for Dacca. The establishment of Dacca University will not certainly affect them, and Calcutta can as long as it likes enjoy the luxury of having more professors than students or professors without students. We do not want to question it's patronage or charity.
১৯২১ সালের জুলাই মাস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হয়। নবাব সলিমুল্লাহ তাঁর স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তব রূপ দেখে যেতে পারেননি। নবাবের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ১৯২১ সালের ১৭ই আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের (বর্তমানে সিলেট নামে পরিচিত) প্রথম সভাতেই একটি প্রস্তাব পেশ করেন যা গৃহীত হয়। ১৯২১ সালের ১৭ই আগস্ট অনুষ্ঠিত এই সভায় চ্যান্সেলর রূপে সভাপতিত্ব করেছিলেন বঙ্গের গভর্নর লর্ড রোনাল্ডশে। এর একদিন আগে অর্থাৎ ১৬ই আগস্ট ১৯২১ ঢাকা জেলা মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খাজা মোহাম্মদ আজম একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে গভর্নরের সাথে দেখা করে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, মুসলমানরা আশা করেছিলেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে তারা বিশেষ সুযোগ সুবিধা পাবেন। এর শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্ররা হবে প্রধানত মুসলিম। কিন্তু সেই ব্যবস্থা না হওয়ায় মুসলিমরা দুঃখিত। ভবিষ্যতে যাতে এদিকে দৃষ্টি রাখা হয় সেজন্য অ্যাসোসিয়েশন গভর্নরকে অনুরোধ জানাচ্ছে। জবাবে গভর্নর বলেন বিষয়টির দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হবে। উল্লেখ্য ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবার সময় মোট ৬০ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র আট জন ছিলেন মুসলমান। তার মধ্যে আবার ছয় জনই ছিলেন আরবি ও ফারসি বিভাগের শিক্ষক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ছাত্রদের জন্য তৎকালীন সর্ববৃহৎ হল তথা সলিমুল্লাহ মুসলিম হন নির্মাণের মাধ্যমে নবাব সলিমুল্লাহর আরেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। উল্লেখ্য ১৯০৬ সালে শাহবাগে অনুষ্ঠিত মুসলিম শিক্ষা সমিতির সম্মেলনে নবাব সলিমুল্লাহ আলীগড়ের অনুকরণে ঢাকা কলেজের সংশ্রবে একটি মোহামেডান হল নির্মাণের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এর জন্য তিনি নিজে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯০০ টাকা দানের কথা ঘোষণা করেন এবং সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ৩৫ হাজার টাকা দানের কথা ঘোষণা করেন। ১৯১০ সালের ১৬ই অক্টোবর নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে নওয়াব ইউসুফজানের সভাপতিিত্বে পূর্ববঙ্গের সম্ভ্রান্ত মুসলিমদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম মুসলিম লীগের এক সভায় ঢাকায় উক্ত মোহামেডান হল নির্মাণের প্রস্তাবটি জোর দিয়ে পুনর্ব্যক্ত করে আবার প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯১২ সালের ২১ শে মার্চ ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে পূর্ববঙ্গের শেষ ছোটলাহাট মিস্টার বেইলী উক্ত হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। (সূত্র: ঢাকা প্রকাশ ২৪ মার্চ ১৯১২ পৃ ৩)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বিলম্বিত হয় এবং মুসলিম হল নির্মাণও স্থগিত থাকে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই মুসলিম ছাত্রদের জন্য স্থাপিত হয়েছিল মুসলিম হল। তখন কলা ভবনের (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন) দোতলার কিছু অংশ উক্ত হলের জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু মুসলিম ছাত্রের সংখ্যা বাড়তে থাকলে স্বতন্ত্র ভবন নির্মাণের প্রয়োজন হয়। ১৯২৫-২৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এজন্য একটি নতুন কমিটি গঠন করেন। মুসলিম হলটি প্রথমে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কাছে তৈরীর পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
কিন্তু ঢাকা জেলা হিন্দু সভা ৭ জুলাই ১৯২৬ সভা করে এর প্রতিবাদ জানায় এবং প্রতিনিধি পাঠায়। এমতাবস্থায় একটি কমিটি গঠন করে স্থান নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই কমিটি জগন্নাথ হলের পশ্চিমে স্থান নির্বাচন করে। উল্লেখ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ডাক্তার আব্দুল্লাহ সুহরাওয়ার্দী নবাব সলিমুল্লাহর নামে মুসলিম হলকরার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে ১৯২৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নবাব সলিমুল্লার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এই হলটির নামকরণ করেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। (ঢাকা প্রকাশ ১৭ই জুলাই ১৯২৭ পৃষ্ঠা ৩)
১৯২৭ সালের মার্চ মাসে বঙ্গীয় আইন পরিষদ মুসলিম হল ভবন তৈরির জন্য ২ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করে। ১৯২৯ সালের ২২ আগস্ট বঙ্গের গভর্নর ও চান্সেলর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসান এই হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৯৩১ সালের ১১ আগস্ট চ্যান্সেলর এর উদ্বোধন করেন। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের দিনে ভিসি মিস্টার জিএইচ ল্যান্ডলির দেওয়া ভাষণ থেকে জানা যায়, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের জন্য নবাব হাবিবুল্লাহ বার্ষিক ৩০০০ টাকা দান করতেন। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের দিনে ভিসি সাহেব আরো জানান, যে মুসলিম ছাত্রদের জন্য বৃত্তিপ্রদানের নিমিত্তে স্যার সলিমুল্লাহর স্মৃতিতে একটি তহবিল গঠনের জন্য নওয়াব হাবিবুল্লাহ ১০ হাজার টাকা দান করবেন। উদ্বোধনী দিনে প্রদত্ত ভাষণে প্রভোস্ট বলেন, নবাব পরিবারে সদস্যগণ বিভিন্নভাবে হলটি নির্মাণে সহায়তা করেছিলেন। (সূত্র: ওপেনিং অফ দা মুসলিম হল ঢাকা, কলকাতা ১৯৩১)
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের স্থাপত্য শিল্প সেই সময় ঢাকা শহরের গর্বের বিষয় ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমানদের জন্য পৃথক হল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল মূলত মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা। পিতা-মাতা যেমন তাঁদের সন্তানদের ধর্মীয় আচার-আচরণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন, তেমনি উক্ত হলে মুসলমান অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণে তারা সেইরূপ পরিবেশেই শিক্ষা লাভ করতেন।
মুসলিম হলের প্রথম প্রভোস্ট সার এ এফ রহমান ও তাঁর সহযোগীরা সচেতনভাবে ইহাকে ইসলামী ভাবধারায় পুষ্ট একটি আবাসিক হলে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। আবাসিক ছাত্রদের জন্য নামাজ ছিল বাধ্যতামূলক। প্রতি শুক্রবার ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতির উপর নিয়মিত আলোচনাসভা হতো এবং রবিবার অপরাহ্ণ নির্দিষ্ট ছিল কোরআন শরীফ এর ক্লাসের জন্য। মুসলিম হলের ছাত্ররা সুপরিচিত মুসলমানী পোশাক যেমন শেরওয়ানি, চুড়িদার, পায়জামা ও টুপি পরিধান করতেন যা প্রায় অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। (সূত্র: সৈয়দ মুস্তাফা আলী, আত্মকথা, পৃষ্ঠা ৯২। আবুল ফজল, রেখাচিত্র, পৃষ্ঠা ১৩৪)
উল্লেখ্য সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে রমজান মাসে দিনের বেলায় ডাইনিং হল বন্ধ রাখা হতো। এর বিরুদ্ধে তৃতীয় বর্ষ আইনের ছাত্র একেএন রহমান ১৯২৮ সালে স্থানীয় দেওয়ানী আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। মুন্সেফ কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা বা ইনজাংশন জারিও করা হয়েছিল। তবে উচ্চ আদালতে তা রদ করা হয় (ঢাকা প্রকাশ, ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৮)
(এ লেখাটিতে "মুসলিম বাংলার অপ্রকাশিত ইতিহাস: ঢাকার নওয়াব পরিবারের অবদান" ডঃ মুহাম্মদ আলমগীর এই বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে)
Comments