top of page

শুভ নববর্ষ🌻শুভ বৈশাখ।‌। বাংলা সন সম্পর্কে কয়েকটি প্রয়োজনীয় তথ্য।। আব্দুল হাই শিকদার

১ . বাংলা সনের স্রষ্টা মুঘল ভারতের শ্রেষ্ঠ গনিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতেহ উল্লাহ খান সিরাজী ।

২ . যাঁর নির্দেশে এই সনের জন্ম তিনি “ভারত-ঈশ্বর”

সম্রাট জালালউদ্দীন মোহাম্মদ আকবর ।

৩ . পরবর্তী সংস্কারক সম্রাট শাহজাহান ও ড . মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ।

৪ . বাংলা সন প্রবর্তিত হয় ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে ।

৫ . বাংলা সনের প্রথম নাম : তারিখ - ই - ইলাহী ।

৬ . বঙ্গাব্দ নামকরণ হয় : ১৫৮৪ সালের ১১ মার্চ ।

৭ . বাংলা সনের গণনা শুরু : ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে । ২য় পানিপথ যুদ্ধে হিমুর বিরুদ্ধে আকবরের বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ।

৮ . বাংলা সন প্রবর্তনের কারণ : মুঘল শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হতো হিজরী সন অনুসারে । আর সুবেহ বাংলায় ফসল তোলা ও খাজনা আদায় হতো সৌরবর্ষ অনুযায়ী ।এতে নানা সমস্যা দেখা দেয় ।এই সমস্যা দূর করার দায়িত্ব দেয়া হ্য় আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজীকে । তিনি একটি নতুন বর্ষপন্জি প্রণয়নের তাগিদ অনুভব করে যে প্রস্তাবনা পাঠান , তার ভিত্তিতেই সম্রাটের আদেশের প্রেক্ষিতে তিনিই জন্ম দেন বাংলা সনের ।

৯ . সিরাজী হিজরী সনকে মডেল হিসাবে নিয়ে কাজ শুরু করেন । সেই হিসাবকে সামনে রেখে ৯৬৩ হিজরীর মোহররম মাস থেকে বাংলা বর্ষের ৯৬৩ অব্দের সূত্রপাত করা হয় ।

১০ . হিজরী মোহররম মাসের সাথে বৈশাখের মিল থাকাতে , ভারতের প্রচলিত শকাব্দের চৈত্র মাসকে বাতিল করে বৈশাখকে করা হলো বঙ্গাব্দের প্রথম মাস ।

১১ . ৪৪৫ বছর পরে হিজরীর সাথে বঙ্গাব্দের পার্থক্য দাঁড়ালো ১৪ বছর ।

১২ . প্রবর্তনের সময় বঙ্গাব্দের সাথে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ( খ্রিস্টাব্দ ) পার্থক্য ছিল ৫৯৩ বছর । অর্থাৎ বাংলা সনের সঙ্গে ৫৯৩ যোগ করলেই পাওয়া যাবে খ্রিস্টাব্দ । সাধারণের ইংরাজী সাল ।

১৩ . যাত্রা শুরুর লগ্নে বাংলা মাসের ৩০ দিনের ৩০টা নাম ছিল ।নামগুলো মনে রাখাও ছিল কষ্টসাধ্য ।

১৪ . প্রথম সংস্কার : বাংলা সনের প্রথম সংস্কারক সম্রাট শাহজাহান এক পর্তুগিজের সাথে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে প্রতিটি মাসকে ৪ টি ভাগে ভাগ করে সূচনা করেন সপ্তাহের।প্রতিটি সপ্তাহ ৭ দিন । গ্রেগরিয়ান পদ্ধতিতে দিনের নাম ঠিক করা হয় , sun থেকে রবিবার , moon থেকে সোমবার ইত্যাদি ।

১৫ . সূচনার সময় বাংলা মাসগুলোর নাম ছিল খোরদাদ , মেহের , শাহরিয়ার , ইসফান্দ ইত্যাদি ।

পরে বিভিন্ন তারকা ও গ্রহের নাম থেকে নাম রাখা হয় বৈশাখ , জ্যৈষ্ঠ , আষাঢ় ইত্যাদি ।

১৬ . দ্বিতীয় সংস্কার : বিশ্ব চলে খ্রিস্টাব্দের পথ ধরে ।বাংলা সনকে তার সাথে সঙ্গত রাখা দরকার ।বিশেষ করে লিপইয়ারের ঝামেলা দূর করা এবং বাংলা সনকে যুগোপযোগী করার ভাবনা থেকেই , ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে গঠন করে পন্জিকা সংস্কার কমিটি ।

বাংলা সনের বর্তমান রূপটি এই কমিটিরই অবদান ।

১৭ . পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সূচনা করেছিলেন সম্রাট আকবর ।তিনিই এই উৎসবের প্রতিয্ঠাতা , স্থপতি ও সত্যিকারের জনক ।

১৮ . সম্রাট আকবরই নির্ধারণ করেন শেষ চৈত্র হবে খাজনা পরিশোধের । ১ বৈশাখ দেশের মানুষ উৎসব করবে , মিস্টিমুখ করবে । হবে হালখাতা ।মেতে উঠবে মেলা , খেলা , হস্তশিল্প প্রদর্শনীতে ।

১৯ . সম্রাট আকবর দি গ্রেট শুয়ে আছেন ফতেহপুর সিক্রিতে । সম্রাট শাহ জাহানের কবর আগ্রার তাজমহলে ,

আমির ফতেহ উল্লাহ খান সিরাজীর কবর নারায়ণগন্জের ফতুল্লায় । বাংলাদেশকে ভালোবেসে এ দেশকেই শেষ শয্যার জন্য বেছে নিয়েছিলেন এই কীর্তিমান । পরে তাঁর সম্মানে স্থানটির নাম রাখা হয় ফতেহ উল্লাহ । যা আজ “ ফতুল্লা”য় নিমজ্জিত হয়েছে ।

ড. শহাদুল্লাহর মাজারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলে , বার ভূঁইয়া নেতা বীর ঈশা খানের পুত্র মুসা খানের কবর ও মসজিদের পাশে ।

২০ . ছায়ানটের রমনা-বৈশাখ উদযাপন ,চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা , সভা সেমিনার , রেডিও ,টিভি- মিডিয়া , পত্রপত্রিকা ,সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় , বাংলা একাডেমি , শিল্পকলা একাডেমি ——- মোট কথা কোথাও আকবর , সিরাজী , শাহজাহান ও শহীদুল্লাহকে স্মরণ করা হয় না । জানানো হয় না সামান্য শ্রদ্ধা ।

২১ . ড মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সংস্কারকৃত আধুনিক বাংলা ক্যালেন্ডার বিশ্ব জুড়ে গৃহিত হলেও ভারতীয় বাঙ্গালীরা এটা মানে না। তারা আঁকড়ে আছে সম্রাট শাহজাহানের জমানা । আর বঙ্গাব্দ নয় তাদের মাথায় বাস করে শকাব্দ।

২২ . তবে এ কথা ঠিক , দৈনন্দিন জীবনে বাংলাদেশী বাঙ্গালী ও ভারতীয় বাঙ্গালী কেউই বাংলা সন অনুসরণ করে না ।সেখানএকচ্ছত্র আধিপত্য খ্রিস্টাব্দের ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

ছবি : সম্রাট আকবর । সম্রাট শাহজাহান । আকবর ও ফতেহউল্লাহ খান সিরাজী ( মুঘল পেইন্টিং ) এবং ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ।

留言


পাঠক নিবন্ধন ফর্ম​

জমা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ!

লেখা প্রদানের জন্য মেইল করুন

banglakotha2011@gmail.com

©2025 by Banglakotha

Bangladesh

bottom of page