সুন্দর ব্যবহার : ইসলাম কি বলে।। ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন
- ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন
- Dec 10, 2021
- 2 min read
ভুল না হলে জেনেছেন যিনি গত কয়েক মাস অসুন্দর ব্যবহার দিয়ে ভাইরাল হয়েছিলেন তিনি ইতোমধ্যে কানাডার পথে। হারিয়েছেন সকল ক্ষমতা! তবে তাকে নিয়ে যারা মন্তব্য করছেন, লিখছেন তাদের অনেকের আচরণও কোন মতেই সমর্থন যোগ্য নয়। একটি খারাপ আচরণের উত্তর কেমন হওয়া উচিত? ইসলাম ব্যবহার নিয়ে কি বলে——
পবিত্র আল-কুরআনে সুন্দর আচরণের ব্যাপারে অনেক আয়াত রয়েছে। আল্লাহর নবীও ছিলেন সুন্দর আচরণের মূর্তপ্রতীক। সুন্দর আচরণ সম্পের্কে কিছু আয়াত উল্লেখ করা হলো : আল্লাহ্ বলেন, আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, পক্ষান্তরে আপনি যদি রূঢ় ও কঠিন হৃদয় হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন। (সূরা আল-ইমরান : ১৫৯)
আল্লাহ্ বলেন, মুমিনদের জন্য আপনি আপনার ডানা অবনমিত করুন অর্থাৎ কোমল আচরণ করুন। (সূরা হিজর : ৮৮)। আল্লাহ্ বলেন, কেউ যখন তোমাকে সৌজন্যমূলক সম্ভাষণ জানাবে প্রতি-উত্তরে তুমি তাকে তার চাইতে সুন্দর ধরনের সম্ভাষণ জানাও, কিংবা অন্তত ততটুকুই জানাও। (সূরা নিসা ৮৬)।
আল্লাহ্ বলেন, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের সাথে সদ্ব্যবহার তথা সুন্দর আচরণ করবে এবং মানুষকে সুন্দর কথা বলবে। (সূরা বাকারা : ৮৩)। মহান আল্লাহ্ বলেন, তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, দরিদ্র, প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথিক এবং যারা তোমাদের অধিকারে এসেছে, সবার সাথে সুন্দর আচরণ কর। (সূরা নিসা : ৩৬)।
আল-কুরআনে ইরশাদ হচ্ছ, পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত সমান হতে পারবে না। এসবের মধ্যে যেগুলো মন্দ কাজ সেগুলো তোমার পালনকর্তার কাছে অপছন্দনীয়। (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৭-৩৮)। স্বয়ং রাসূল (সাঃ) ছিলেন উত্তম নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম মডেল। আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি উত্তম নৈতিক চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’ (সূরা আল-কালাম : ৪)। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।’
পবিত্র কুরআনের পাশাপাশি হাদিসেও সবার সাথে সুন্দর আচরণ করতে এবং দয়া, সহানুভূতি ও কোমলভাবে কথা বলতে বলা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সা) এরশাদ করেছেন, উত্তম কথা বা ভালো কথাও একটি সাদকা। (বুখারি ও মুসলিম)। প্রিয়নবী (সা) এরশাদ করেছেন, সদকা বা দান-খয়রাত মানুষকে শোচনীয় মৃত্যু হতে রক্ষা করে আর সুন্দর আচরণ আয়ুবর্ধক হয়। সুন্দর আচরণকারীকে আল্লাহ্ ভালোবাসেন। রাসূল (সা) বলেন, আল্লাহ্ কোমল ব্যবহার করেন, তাই সব ব্যাপারে তিনি কোমল আচরণ পছন্দ করেন। (বুখারি ও মুসলিম)। যে ব্যক্তি সুন্দর আচরণ থেকে বঞ্চিত সে কল্যাণ থেকেও সম্পূর্ণ রূপে বঞ্চিত। (মুসলিম)।
রাসূল (সা) বলেন, মুমিন হয় উত্তম চরিত্রের অধিকারী। অর্থাৎ সে বদমেজাজি, বিদ্বেষভাবাপন্ন ও মানুষের সাথে রুক্ষ আচরণকারী হয় না। এটা মুমিনের শান নয়। মুসলমান তো অন্যের সাথে নম্র আচরণ করবে, রুক্ষ আচরণ করবে না। রাসুল (সা) বলেছেন, ‘সুন্দর আচরণই নেক আমল।’ (সহিহ মুসলিম)।
ইসলামের সেই আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে মানুষের সাথে ভালো কথা বলা এবং সুন্দর আচরণ করা অন্যতম একটি। ভালো কথা, ভালো ব্যবহার, সুন্দর আচরণ যাই বলি না কেন, এগুলো হচ্ছে একটি শিল্প। সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তির সার্বিক পরিচয় ফুটে ওঠে, তার উন্নত ব্যক্তিত্বের প্রমাণ মেলে। সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হন। আমরা খুব সর্তকভাবে লক্ষ করলাম কি শব্দ প্রয়োগ হয়েছে? কেমন আচরণ এটি? ইসলাম শুধু নয়-এই জাতীয় আচরণ কোন ধর্ম সমর্থন করে না। প্রকৃত পক্ষে ভালো আচরণই পারিবারিক, শিক্ষা, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল চালিকা হউক-সবসময় সবাই দোয়া করুন!!!
Comentarios