top of page

মহাকবি কায়কোবাদের চারটি বহুল পাঠক নন্দিত কবিতা

বঙ্গভূমি ও বঙ্গভাষা

 

বাংলা আমার মাতৃভাষা

বাংলা আমার জন্মভূমি।

গঙ্গা পদ্মা যাচ্ছে ব’য়ে,

যাহার চরণ চুমি।

ব্রহ্মপুত্র গেয়ে বেড়ায়,

যাহার পুণ্য-গাথা!

সেই-সে আমার জন্মভূমি,

সেই-সে আমার মাতা!

আমার মায়ের সবুজ আঁচল

মাঠে খেলায় দুল!

আমার মায়ের ফুল-বাগানে,

ফুটছে কতই ফুল!

শত শত কবি যাহার

গেয়ে গেছে গাথা!

সেই-সে আমার জন্মভূমি,

সেই-সে আমার মাতা!

আমার মায়ের গোলা ছিল,

ধন ধান্যে ভরা!

ছিল না তার অভাব কিছু,

সুখে ছিলাম মোরা!

বাংলা মায়ের স্নিগ্ধ কোলে,

ঘুমিয়ে রব আমি!

বাংলা আমার মাতৃভাষা

বাংলা জন্মভূমি!

 

 সুখ

‘সুখ সুখ’ বলে তুমি কেন কর হা-হুতাশ,

সুখ ত পাবে না কোথা, বৃথা সে সুখের আশ!

পথিক মরুভূ মাঝে খুঁজিয়া বেড়ায় জল,

জল ত মিলে না সেথা, মরীচিকা করে ছল!

তেমতি এ বিশ্ব মাঝে, সুখ ত পাবে না তুমি,

মরীচিকা প্রায় সুখ, – এ বিশ্ব যে মরুভূমি!

ধন রত্ন সুখৈশ্বর্য কিছুতেই সুখ নাই,

সুখ পর-উপকারে, তারি মাঝে খোঁজ ভাই!

‘আমিত্ব’কে বলি দিয়া স্বার্থ ত্যাগ কর যদি,

পরের হিতের জন্য ভাব যদি নিরবধি!

নিজ সুখ ভুলে গিয়ে ভাবিলে পরের কথা,

মুছালে পরের অশ্রু – ঘুচালে পরের ব্যথা!

আপনাকে বিলাইয়া দীনদুঃখীদের মাঝে,

বিদূরিলে পর দূঃখ সকালে বিকালে সাঁঝে!

তবেই পাইবে সুখ আত্মার ভিতরে তুমি,

যা রুপিবে – তাই পাবে, সংসার যে কর্মভূমি!

 

দেশের বাণী

কে আর বুঝিবে হায় এ দেশের বাণী?

এ দেশের লোক যারা,

সকলইতো গেছে মারা,

আছে শুধু কতগুলি শৃগাল শকুনি!

সে কথা ভাবিতে হায়

এ প্রাণ ফেটে যায়,

হৃদয় ছাপিয়ে উঠে – চোখ ভরা পানি।

কে আর বুঝিবে হায় এ দেশের বাণী!

এ দেশের লোক যত

বিলাস ব্যসনে রত

এ দেশের দুঃখ কিছু নাহি বুঝে তারা।

দেশ গেল ছারেখারে,

এ কথা বলিব কারে?

ভেবে ভেবে তবু মোর হয়ে গেছে সারা!

প্রাণভরা হাহাকার

চোখ ভরা অশ্রুধার,

এ হৃদি যে হয়ে গেছে মরুভূমি-পারা!

 

আযান

কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।

মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর

আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।

কি মধুর আযানের ধ্বনি!

আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,

কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে

কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।

হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,

কি যে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-

কত সুধা আছে সেই মধুর আযানে।

নদী ও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।

ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কান

কি এক আবেশে মুগ্ধ নিখিল ধরণী।

ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,

আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি।

আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে,

ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,

প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আযান,

তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে।

নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,

এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,

মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে

কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে!

জাগাইতে মোহমুগ্ধ মানব সন্তানে।

আহা কি মধুর ওই আযানের ধ্বনি।

মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর

আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।

Recent Posts

See All
বাংলার রূপ।। নাজমুল হক সিকদার

সবুজের বুকে আজি পিয়াসি হৃদয় শ্যামলীমার টানে হারিয়েছে, কোন সে দিগন্তে ছুঁয়েছে নীলিমা অবুঝ হৃদয় সেথায় ছুটে চলেছে। বাংলার মাটি সবুজের ঘাটি...

 
 
 

Comments


পাঠক নিবন্ধন ফর্ম​

জমা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ!

লেখা প্রদানের জন্য মেইল করুন

banglakotha2011@gmail.com

©2025 by Banglakotha

Bangladesh

bottom of page