শিক্ষাঙ্গনে বিপন্ন শিশুদের আর্তনাদ
- শাহজালাল খান
- 5 days ago
- 3 min read

আমরা হাত পা ও মাথায় নিউরন ঠিকঠাক থাকা কোন শিশুকে তো বিকলাঙ্গ ঘোষনা করতে পারি না ! মানব শিশুর মস্তিষ্কতো আমাদের কাঙিক্ষত তাল গাছের তাল ফল না , যে আমি তার রস আস্বাদন করবো আর তার আঁটিটি ভাগাড়ে ফেলে দেবো । সভ্যতাতো জানেই ভাগাড়ে ফেলা আটিই পৃথিবীতে চারার জন্ম দেয় । তবে তাকে তো উর্বর মাটিতে পুনর্বাসন করতে হবে । রাষ্ট্র কোন মানব মস্তিষ্ককে তো কংক্রিটে নিক্ষেপ করতে পারে না ? কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ফেল নামের সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে তাই করছে !
বিদ্যালয়ে ৩৬৫০ দিন (১০ বছর ) বিদ্যার বই পীঠে বওয়ার পর একটি শিশুকে তার স্কুল ও রাষ্ট্র যখন ঘোষণা দিয়ে ঢোল পিটিয়ে বলে , বিদ্যা গ্রহণের ক্ষেত্রে তুমি ফেল বা অকৃতকার্য ! তখন ওই শিশুটির কাছে আমরা যারা বিদ্যাদাতারা আছি ? তারা আসলে কী বার্তা দিতে চাই ! অকৃতকার্য শিশুটি কি তখন ভাবে না, এই অধরা বিদ্যাচর্চায় যারা পাশ করে, তারা সেই লৌহমাহফুজ নামক জায়গা থেকে বোধহয় নির্বাচিত কোন শিশু ? বিদ্যাচর্চার ভূমিতে মেধা ও বুদ্ধিতে আমাদের মতো অযাচিত মানবসন্তানদের তাদের পাশে কোন জায়গাই নেই ! সমাজে প্রতিটি কর্মঘন্টার স্বীকৃতি ও প্রাপ্তি যদি থাকে । তাহলে শিশুর সাড়ে তিন হাজার দিনের বিদ্যা-যাত্রার কোনই স্বীকৃতি থাকবে না কেন ?
অকৃতকার্য এই শিশুটির বাবা তখন কি ভাবে ? সে ভাবে এই পৃথিবীতে আমি হলাম সবচেয়ে অদক্ষ এক বাবা , তার মা এই পৃথিবীর সবচেয়ে অপদার্থ এক নারী । তাই তার গর্ভে এই ধরণীর সবচেয়ে অপাঙতেয় শিশুটি জন্ম গ্রহণ করেছে । অথবা বিদ্যা থাকে ওই ভদ্র পল্লীতে , এই কাঁদামাটির গ্রামে অথবা শহুরে বস্তিতে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না । ‘’ সুতরাং আর না । এবার চলো মুড়ি মুড়কির দোকানে , অথবা শহরে রাস্তায় যানবাহন চালনে অথবা বাল্য বিয়ের পিঁড়িতে তোমাকে দাদন দিয়ে আসি !
শুধু জন্মগ্রহণ করলেই রাষ্ট্র যদি একটি শিশুকে স্বীকৃতি দিতে পারে , তবে শিশুর ৩৬৫০ দিন রাষ্ট্র যে তার পরিচর্যা করলো , তার স্বীকৃতি দেবে না কেন ? বিদ্যাচর্চায় তো কৃতকার্য -অকৃতকার্য থাকতে পারে না । বিদ্যাচর্চা হলো শিশু কতটুকু শিখলো তার একটি মানদণ্ড বা স্মীকৃতি । সেখানে কেউ একশ এর মধ্যে দশ পেলেও তার সেই দশঅংক নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার একটি রাস্তাতো থাকতে হবে ? বিদ্যাতো এমন না যে, তা নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে । একটি সুস্থ শিশুর কোনই ধারণ ক্ষমতা নেই , এই কথা বলে যারা ফেল নামক সংস্কৃতি চালু রেখে বিদ্যাশিক্ষার বিকল্পপথগুলো তৈরি করে না , তারাই শিক্ষার আঙিনার সবচেয়ে বড় অকৃতকার্য !
শিশু যখন যুবক হয় তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে একটি বিদ্যা পড়তে দেওয়া হয় । আবার সে যখন শিশু থাকে তখন তাকে মহাপণ্ডিত ভেবে বারোটি বা চৌদ্দটি বিদ্যার মোটা মোটা বই গলধঃকরণ করতে দেওয়া হয় । অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গণিত , প্রযুক্তি , ভাষা , নৈতিকতা এই বিষয়ের বাইরে একটি শিশুর আর কি শেখার আছে ? আমাদের জীবনেও বা এতো এতো বিদ্যা কোন কাজে লেগেছে ?
বিদ্যালয়ে তো খেলার মাঠ থাকে । সেখানে ফাইনাল ম্যাচে কি হয় ? বিজয়ী পক্ষ কাপ নেয় আর বিজিতকেও সেখানে বিজয়ের গলার মাল্য পরানো হয় । যেটি ফাইনাল , তার তো রানার আপ থাকতে হবে ? আনন্দের উল্লাস আর বেদনার স্বীকৃতি না হলে সে বিপন্ন মাঠে কে বা কারা খেলা দেখতে যেতে চায় ? কিংবা খেলতেও বা চায় ?
আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেই গড়ে তুলেছি একটি বিপন্ন মাঠের মতো । ছয়লক্ষ ফেলকরা শিশুর বারোলক্ষ হাততো এই বাংলাদেশের অংশ । তার ব্যর্থতাকে সফলতায় পুনরুজ্জীবন ঘটানোর ব্যবস্থা আমাদের এখানে কোথায় ? শিশুকে তো আপনাকে গন্তব্যে পৌছায়ে দিতে হবে । অযোগ্য বলে আপনি তো তাকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে যেতে পারেন না !
চাষের ক্ষেতে কেবল হাইব্রিড জাতের ফল উৎপাদনের দিকে নজর দিতে গিয়ে ভেষজ গাছগুলোর শিরশ্চেদ যদি ঘটাতেই থাকি , তাহলে শরীরটা এক সময় অনাকাঙ্ঘিত বেঢকে রূপান্তর হবে । তখন আর সমাজে মুখ দেখানো যাবে না ।
তাই পরিবর্তিত বাংলাদেশে শিক্ষার আমূল সংস্কার করতেই হবে । নইলে বিপন্ন মাঠটি হবে বড়ই অমানবিক ! করুণ! বিধ্বস্ত ! বিবর্ণ ও বেহালে !
১১ জুলাই , ২০২৫ শুক্রবার
এস এসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরেরদিন ।
Comentários