মুদ্রায় জাতীয় কবি
- বাঙলাকথা
- Jun 2
- 2 min read
*এবার টাকায় এলো রবীন্দ্রনাথের কবিতা!
*অবহেলিত জাতীয় কবি, নাই তাঁর কবিতা
*আছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি, নাই গ্রাফিতির নজরুল !!!



বাংলাদেশের নতুন মুদ্রায় গ্রাফিতি এসেছে, কিন্তু নজরুলকে আনা হয়নি। নতুন মুদ্রায় কবিতা এসেছে। কিন্তু সেই কবিতা নজরুলের নয়, বরং রবীন্দ্রনাথের। অভ্যুত্থানের কোথাও রবীন্দ্রনাথের কবিতা দেখা যায়নি, ছিল নজরুলের কবিতা ও গান। কিন্তু মুদ্রায় নজরুলকে বাদ দিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে।
পৃথিবীর সকল দেশেই তাদের জাতীয় কবির বিশেষ মর্যাদা থাকে। এমনকি তাদের মুদ্রায় জাতীয় কবির ছবি এবং কবিতার উদ্ধৃতি থাকে।

স্কটল্যান্ড এর মুদ্রায় রয়েছে তাদের জাতীয় কবি Robert Burns এর ছবি এবং কবিতার
উদ্ধৃতি।


বাংলাদেশের মুদ্রায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছবি এবং কবিতার উদ্ধৃতি নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বসাহিত্যে মানুষের পক্ষে সবচেয়ে বলিষ্ঠ উচ্চারণ কাজী নজরুল ইসলামের:
"গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই
নহে কিছু মহীয়ান।"
কিংবা অন্ধকার থেকে আলোর পথে সাহিত্যে সবচেয়ে বলিষ্ঠ উচ্চারণ:
"ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা টুটাবো তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।"

কিংবা নজরুলের বিদ্রোহী বা অন্য যে কোনো উদ্ধৃতি মুদ্রায় উল্লেখ করা হলে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা অনেক বেড়ে যেতো।
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কবির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণীয় করে রাখে দুটি ডাকটিকিট প্রকাশের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৭ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত ৪০ পয়সা ও ২ টাকা ২৫ পয়সা মূল্যের সেই ডাকটিকিটগুলোতে দেখা যায়, কবির প্রতিকৃতিসহ তাঁর রচিত বাংলাদেশের রণসংগীতের চারটি চরণ:
‘ঊষার দুয়ারে হানি’ আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা টুটাব তিমির রাত,
বাধার বিন্ধ্যাচল’ ।
এবং
‘বিদ্রোহী’ কবিতার দুটি চরণ:
‘বল বীর—
চির উন্নত মম শির!’
১৯৯৯ সালে কবির জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ছয় টাকা মূল্যমানের একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। ওই টিকিটে ‘মানুষ’ কবিতার অংশবিশেষ মুদ্রিত হয়। ভারতের ডাক বিভাগও কাজী নজরুল ইসলামের শততম জন্মবর্ষ স্মরণীয় করে রাখে তিন রুপি মূল্যমানের একটি ডাকটিকিট প্রকাশের মধ্য দিয়ে।
২০০৪ সালের ৩ জুন ‘ইরান-বাংলাদেশ মৈত্রী স্মারক’ শিরোনামে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ১০ টাকা মূল্যের দুটি আলাদা ডাকটিকিটে স্থান পেয়েছেন ফার্সি ভাষার কবি হাফিজ সিরাজী ও বাংলা ভাষার কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
বিদ্রোহী কবিতা রচনার ৯০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২০১১ সালে নজরুলের উপর চারটি ডাকটিকিটসহ একটি স্যুভেনির শিট প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ সময় স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করে। তবে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষে ২০২১ সালে এ ধরনের কোনো আয়োজনই করা হয়নি।
স্যুভেনির শিটে বিদ্রোহী কবিতার প্রথম কয়েকটি চরণ মুদ্রিত হয়:
‘বল বীর—
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি,
নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর—
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি’
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান
জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর—
আমি চির-উন্নত শির!’
একই সঙ্গে কবীর চৌধুরীর অনুবাদে কবিতাটির ওই অংশের ইংরেজি অনুবাদও যুক্ত করা হয়। কবিতার পাশাপাশি একশ টাকা মূল্যমানের ওই স্যুভেনিরে দেখা যায়, সৈনিক বেশে নজরুলের আলোকচিত্র ঘিরে রেখেছে চারটি স্মারক ডাকটিকিট এবং প্রতিটি টিকিটের বুকে রয়েছে কবির নানা বয়সের প্রতিকৃতি। প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যমানের ডাকটিকিটে কবির প্রতিকৃতি ছাড়াও বাংলাদেশে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থাপত্য উঠে এসেছে। কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২০২২ সালের ২৪ মে সর্বশেষ ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সকলের মুখে মুখে, দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতে ছিলেন নজরুল। এখনও সারা দেশের গ্রাফিতিতে নজরুলের উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সকলের প্রত্যাশা ছিল, দেশের নতুন মুদ্রায় এর প্রতিফলন থাকবে।
Comments